
ব্রিটিস শাসনকালে ভারতবর্ষের মুসলিমরা শিক্ষা অর্জনের ক্ষেত্রে অনেক পিছিয়ে ছিল। এছাড়া মফস্বল অঞ্চল ছিল শিক্ষবিস্তারের ক্ষেত্রে আরও পিছিয়ে। এতদসত্ত্বেও নিজ প্রচেষ্টা ও মেধার গুণে অনেক মেধাবী মুসলিম ব্যক্তি শিক্ষা অর্জন করেছিল এবং নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করেছিল। দাদনচক গ্রামের প্রয়াত কর্মকার ইদ্রিশ আহম্মেদ মিঞা ছিলেন তেমনি একজন ব্যাক্তি। তিনি সেই সময় শিক্ষা গ্রহণ করেছিলেন এবং জ্ঞান অর্জনের গুরুত্ব উপলব্ধি করে সকলের মধ্যে জ্ঞানের বিকাশ ঘটানোর প্রয়াস লাভ করেছিলেন। দাদনচক গ্রামে অবস্থিত আজকের আদিনা ফজলুল হক সরকারী কলেজ সেই প্রয়াসেরই ফল।
তিনি সি'র করেছিলেন যে শোষিত বঞ্চিত ও অবহেলিত মানুষকে জমিদার, জোতদার, ঋনদাতা মহাজন ও গ্রাম্য চণ্ডালদের অত্যাচার ও নিপীড়ন থেকে মুক্ত করতে হলে এবং তাদের যাবতীয় কুসস্কার, ভীরুতা ও স'বিরতা দূর করে একটি আত্মপ্রত্যয়শীল সমাজ গড়ে তুলতে হলে সর্বদা প্রয়োজন শিক্ষার। কারণ তিনি উপলব্ধি করেন যে শিক্ষাই সকল উন্নতি ও উৎকর্ষ সাধনের মূল চাবিকাঠি।
তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের মালদহ জেলার বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, বিশিষ্ট সমাজ সেবক ও প্রতিস্থাপক ইদ্রিশ আহমেদ মিঞা তাঁর নিজ গ্রাম দাদনচকে বিশ শতকের প্রথম দিকেই প্রতিষ্ঠা করেন প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স-রের শিক্ষা ব্যবস্থা। এছাড়া তিনি একটি উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠার মানসে তাঁর সংগ্রাম অব্যাহত রাখেন। ১৯৩৫ সালে ভারত শাসন আইনে প্রাদেশিক স্বায়ত্ব শাসন ব্যবস্থা প্রবর্তন করার ফলে ১৯৩৭ সনে বঙ্গীয় ব্যবস্থাপক সভার নির্বাচনে কৃষক প্রজা পাটির প্রার্থী হিসাবে ইদ্রিশ আহমেদ মিঞা মনোনয়ন পান এবং ভোটে জয়লাভ করেন। ঐ সময় শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক বাংলার মূখ্যমুন্ত্রী হন এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত হন। বঙ্গীয় ব্যবস'াপক সভার প্রথম অধিবেশনে ইদ্রিশ আহমেদ মিঞা শিক্ষায় অনগ্রসর মালদহ জেলায় একটি কলেজ প্রতিষ্ঠার প্রস-াব উপস'াপন করেন এবং অত্যন- বলিষ্ঠ, যুক্তিপূর্ণ ও আবেগময় ভাষায় তিনি উচ্চ শিক্ষার বিকাশের পক্ষে তার বক্তব্য তুলে ধরেন। ঐ সভায় তাঁর প্রস্তাবটি পাশ হয়ে যায়। এবং শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হকের সহযোগিতায় ১৯৩৮ সনে আদিনা কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন।
কলেজের ইতিহাস
উত্তর মালদহের আদিনা শশহাজারি ওয়াকফ স্টেটের মতওয়াল্লি বেগম শাসনুন্নাহার কলেজের উন্নতি কল্পে তিনশত বিঘা জমি দান করেছিলেন। কিন্তু ঐসব জমি কলেজের উন্নয়নে ব্যবহার করেছিল কিনা তা জানা যায় না। তবে কলেজের নামের সাথে আদিনা শব্দটি থেকে যায় এছাড়া কলেজের প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে ফজলুল হকের অবদান অনস্বীকার্য বলে ইদ্রিশ আহমেদ মিঞা হক সাহেবকে স্মরনীয় করে রাখার মানসে কলেজের নাম দেন আদিনা ফজলুল হক কলেজ।
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কলেজটিকে প্রথমেই স্থায়ী এফিলিয়েশন দান করে। উচ্চ মাধ্যমিক স-রে বাংলা, ইংরেজী, আরবী, উর্দু, ফার্সী, সংস্কৃত, ইতিহাস, পৌরনীতি, যুক্তিবিদ্যা ও গণিত এই দশটি বিষয় পড়ানোর জন্য বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদন দেন।
কলেজের প্রথম অধ্যক্ষ জনাব মো: সানাউল্লাহ এম.এ (আরবী) ১৯৩৮ সনে আদিনা ফজলুল হক কলেজ ইন্টারমিডিয়েট অনার্স কলেজ হিসাবে যাত্রা শুরু করলেও আজ এটি একটি পূর্ণাঙ্গ স্নাতক কলেজে রূপ নিয়েছে। ১২ একর জমির আম্রবীথির মনোরম পরিবেশে ১৪ টি সুদৃশ্য ভবনের সমন্বয়ে আদিনা ফজলুল হক সরকারী কলেজ ইতিহাসের একটি অংশ হিসাবে দাঁড়িয়ে আছে।